জাকাত বিষয়ক আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর: পর্ব-২ (দশটি প্রশ্নের উত্তর)
◆ ১১. প্রশ্ন: চাকরি করার পরও বেতনের টাকায় সংকুলান না হলে জাকাত নেওয়া যাবে কি?
উত্তর:
চাকরি, কৃষিকাজ, ব্যবসা ইত্যাদি উপার্জনের পথ যাই হোক না কেন যদি তা দ্বারা সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বা কষ্ট হয় তাহলে সে জাকাত গ্রহণ করতে পারবে। কেননা সে সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত অর্থকষ্টে ভোগা দরিদ্র (ফকির/মিসকিন)-এর অন্তর্ভুক্ত।
◆ ১২. প্রশ্ন: আমার এক আত্মীয়ের কিছু জমি আছে। তিনি কয়েক মাস ধরে অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেন না। তার ছোট তিন মেয়ে আছে। পরিবারে রোজগার করার মতো আর কেউ নেই। এখন কি তিনি জাকাত খেতে পারবে?
উত্তর:
যে ব্যক্তি আর্থিক অনটনের কারণে তার নিজের অথবা তার স্ত্রী পরিবার ও সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খায় বা দারিদ্র্যতার কারণে যার জীবন পরিচালনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে সে ব্যক্তি জাকাত খাওয়ার হকদার। কুরআনের সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাতের যে আটটি খাতের কথা আলোচিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে নিঃস্ব, অসহায় ও দরিদ্র-পীড়িত ব্যক্তিবর্গ প্রথম স্তরে রয়েছে। অতএব প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি জাকাত গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহু আলম।
◆ ১৩. প্রশ্ন: আমাদের স্কুল ভাড়া নেয়া আছে, সেখানে ৩ লক্ষ টাকা এডভান্স দেওয়া আছে। এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এখন কি এই টাকার জাকাত দিতে হবে? স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পরে এই টাকা পাবো কি না তা ১০০% সিউর না।
উত্তর:
যে তিন লক্ষ টাকা সিকিউরিটি হিসেবে দেওয়া আছে যদি তা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা বা প্রবল ধারণা থাকে তাহলে তার জাকাত দিতে হবে-যদি জাকাত দেওয়ার মত অর্থ বিদ্যমান থাকে। অন্যথায় পরবর্তীতে যখন হাতে পাওয়া যাবে তখন পেছনের যে কয়েক বছরের জাকাত দেওয়া হয়নি সেগুলো একসাথে দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু না পাওয়া গেলে জাকাতের কোন প্রশ্ন নেই।
◆ ১৪. প্রশ্ন: আমি প্রায় আট মাস যাবত তেলের ব্যবসা করি। আমাকে কি জাকাত দিতে হবে?
উত্তর:
আপনার অন্যান্য সম্পদ সহ ব্যবসায়িক পণ্য ও মূলধনের পরিমাণ যদি নিসাব তথা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা ৫৯৫ গ্রাম রূপার সমপরিমাণ হয় এবং তার উপর এক বছর অতিবাহিত হয় তাহলে জাকাত আসবে; অন্যথায় নয়।
◆ ১৫. প্রশ্ন: এখন আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডে যত টাকা জমা আছে এই টাকার কি জাকাত দিতে হবে?
উত্তর:
প্রভিডেন্ট ফান্ড কী? কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় ব্যক্তির আয় থেকে প্রতি মাসে মূল বেতনের নির্দিষ্ট একটা অংশ (যেমন:৭/১০ শতাংশ) কেটে একটি তহবিলে রাখা হয়। এর মাধ্যমে যে অর্থ জমা হয় তা চাকরিজীবী চাকরি শেষে পান। টাকা জমা রাখা এই তহবিলকেই বলা হয় প্রভিডেন্ট ফান্ড। অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে টাকাটা জমা হয় প্রকৃতপক্ষে তার মালিক হলো, উক্ত চাকরিজীবী-যা সে চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পেয়ে থাকে। অতএব তারও জাকাত দিতে হবে-যদি তা পাওয়াটা সুনিশ্চিত হয় বা প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আশা করা যায়। কিন্তু যদি পাওয়া-না পাওয়া ব্যাপারে সংশয় থাকে হয় তাহলে যখন তা হাতে পাওয়া যাবে তখন পেছনের যে কয় বছরের জাকাত দেওয়া হয়নি সেগুলো একসাথে দিয়ে দিবে।
◆ ১৬. প্রশ্ন: বৃদ্ধাশ্রমের জন্য জাকাতের অর্থ ব্যবহার করা কি জায়েজ? কেননা সেখানে অনেক ধনী মানুষও বসবাস করে।
উত্তর:
বৃদ্ধাশ্রমের জন্য বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থ ব্যবহার করা জায়েজ নেই। কেননা তা জাকাতের নির্দিষ্ট ৮টি খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে বৃদ্ধাশ্রমে অবস্থানকারীদের মধ্যে যারা অসহায়-দরিদ্র অবস্থায় আছে তাদেরকে তা দেওয়া যাবে; ধনীদেরকে নয়।
◆ ১৭. প্রশ্ন: রমজান মাসে জাকাতের টাকা হিসাব করে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এ মাসেই কিছু দেওয়া হলো আর বাকিটা রমজানের পরে দেওয়া হবে। এরকম কি করা যাবে?
উত্তর:
জাকাতের টাকা বের করার পরে যথাসম্ভব দ্রুত তা হকদারদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া উচিত। কেননা মানুষের মৃত্যু কখন এসে যায় তা কেউ জানে না। তখন হয়তো উক্ত জাকাতের অর্থ সঠিকভাবে হকদারদের কাছে পৌঁছবে না।
তবে বিশেষ কোনও প্রয়োজনে বণ্টনে বিলম্ব হলে বিশ্বস্ত কোনও ব্যক্তিকে বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। অথবা পরিবার বা ওয়ারিশদের মধ্যে থেকে বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তিকে লিখিতভাবে (এটাই উত্তম) বা মৌখিকভাবে এ মর্মে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে যে, তার অবর্তমানে যেন জাকাতের এই পরিমাণ অর্থ হকদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
◆ ১৮. প্রশ্ন: আমাদের একটা ইসলামি সেবা মূলক দরিদ্র কল্যাণ সংস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে ইসলামের বিধান মেনে মেনে অত্র পৌরসভার সকল গরিব ও অসহায়দের জন্য কাজ করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা জাকাতের টাকা দিয়ে অত্র সংস্থার অফিস ভাড়া দিতে পারব কি?
উত্তর:
আল্লাহ আপনাদের এই প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং এই সংস্থার সাথে জড়িত সকলকে উত্তম বিনিময় দান রকুন। আআমিন।অতপর, জাকাতের অর্থ দ্বারা উক্ত সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার অফিস ভাড়া দেওয়া যাবে না। কেননা তা জাকাতের খাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়।
◆ ১৯. প্রশ্ন: ২টা গাড়ি ভাড়ায় দেওয়া আছে। এগুলো থেকে ভাড়া বাবদ অর্থ উপার্জিত হয়। প্রশ্ন হলো, উক্ত গাড়ির উপর কি জাকাত দিতে হবে? উল্লেখ্য যে, গাড়ির মূল্য ১৪ লাখ টাকা।
উত্তর: নিজের ব্যবহারের জন্য বা ভাড়ার জন্য নির্ধারিত গাড়িতে জাকাত নাই। তবে সেখান থেকে প্রাপ্ত ভাড়াকে অন্যান্য সম্পদের সাথে যুক্ত করে যদি তা জাকাতের নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে তাতে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে।
◆ ২০. প্রশ্ন: জাকাতের টাকা সর্বনিম্ন কত দেওয়া যাবে? ১০০, ৫০০, ১০০০ এ রকম দেওয়া যাবে কি? কারণ শহরে অনেক পরিমাণ দরিদ্র মানুষ আসে। যারা সবাই জাকাত পাওয়ার আশায় থাকে। এক্ষেত্রে করণীয় কি?
উত্তর:
জাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে আটটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেগুলোর বাইরে যাওয়া যাবে না। সেগুলোর মধ্যে প্রথম হলো, ফকির-মিসকিন তথা অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। সুতরাং আপনি তাদের মধ্যে জাকাতে অর্থ বিতরণ করবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাকে কী পরিমাণ দিবেন সে ব্যাপারে জাকাত গ্রহীতাদের অবস্থা, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন। জাকাত বণ্টনের ক্ষেত্রে কাকে কী কতটুকু দিতে হবে-শরিয়তে এ বিষয়ে বিশেষ কোনও পরিমাণ নির্ধারণ করেনি বরং তা জাকাত দাতার উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আপনি ইচ্ছে করলে আপনার জাকাতের সম্পূর্ণ টাকা অথবা কয়েকজনের টাকা একত্রিত করে কোনও একজন গরিব মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন। আবার ইচ্ছে করলে আপনার জাকাতের টাকা একাধিক গরিব অসহায় মানুষের মাঝে অল্প অল্প করে বণ্টন করতে পারেন।
মোটকথা, মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী কাকে কীভাবে কী পরিমাণ অর্থ দিলে সে উপকৃত হবে সে বিষয়টা মাথায় রেখে জাকাতের অর্থ বণ্টন করবেন।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
#abdullahilhadi
#সংক্ষিপ্ত_প্রশ্নোত্তর