Posts

এখন যৌবন যার হজে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

 "এখন যৌবন যার হজে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"


পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, পবিত্র ও সুন্দরতম ঘর হচ্ছে কাবা শরিফ। যুগ যুগান্তর ও

কাল পরিক্রমায় এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আল্লাহর মেহমানরা চিরশান্তির নীড় জান্নাতে যাওয়ার প্রত্যাশা বুকে নিয়ে তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ, পবিত্র ও আলোকিত করার উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন।

কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, সারা পৃথিবীর মধ্যে আমাদের ভারত উপমহাদেশ থেকে আসা এত বৃদ্ধ, দুর্বল এবং রোগ-শোকে জর্জরিত হাজি আর কোথাও থেকে দেখা যায় না।

আমাদের হাজিদের মধ্যে যুবকদের সংখ্যা খুবই কম। ১০০ জনের একটি হজ কাফেলায় খুব বেশি হলে ৩-৪ জন যুবক হাজি পাওয়া যায়। এটি খুবই চিন্তার বিষয়।

অতি বার্ধক্য ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেক হাজি সঠিকভাবে হজ আদায় করতে পারে না, হজের কার্যাবলী সম্পাদন করতে গিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত এবং অচল হয়ে পড়ে। প্রচুর পরিমাণ হাজি হাসপাতালমুখী হয়, অনেকেই হজ কাফেলা থেকে দলছুট হয়ে হারিয়ে যায়।‌ এমন আরো অনেক সমস্যা ঘটে। যে বিষয়ে হজ এজেন্সি, হজের সেবা দানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস এবং সংশ্লিষ্টগণ মারাত্মক ভুক্তভোগী।


▪️ আমাদের সমাজে অনেকেই যুবক বয়সে হজ করে না বা হজ করতে উৎসাহ বোধ করে না-এর অন্যতম একটি কারণ হলো, তারা ভাবে, যৌবন বয়সে হজ করলে এরপরে 'হজ ধরে রাখতে পারবে না' বা হজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে না এবং গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে না।


তাই যৌবনে আমোদ-ফুর্তি করে বুড়ো বয়সে হজ করে নিজেকে শুদ্ধ করে নেবে। তাই দেখা যায়, দৃষ্টিশক্তি যখন ক্ষীণ হয়ে আসে, পিঠ কুঁজো হয়ে বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে, যখন পাপ করার শক্তিই আর থাকে না তখন হজ করতে যান এ দেশের অনেক মানুষ।


তার মানে আমাদের নিয়ত ও চিন্তাভাবনার মধ্যেই সমস্যা।


কিন্তু এটা নিতান্তই ভুল চিন্তাভাবনা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পরেও যেহেতু মানুষের জীবনে পাপ কর্ম ও ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে, রমজান মাসে রোজা রাখার পরেও মানুষের দ্বারা নানা গুনাহের কাজ ঘটে যেতে পারে ঠিক একইভাবে হজ করার পরেও তার জীবনে ভুলভ্রান্তি ও গুনাহের কাজ ঘটতে পারে। কারণ মানুষকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য শয়তানের সার্বক্ষণিক কুট পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সাথে রয়েছে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কুপ্রবৃত্তি যা তাকে প্রতিনিয়ত আল্লাহর নাফরমানির দিকে প্ররোচিত করে।


কিন্তু রব্বুল আলামিনের তওবার দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। ‌ইচ্ছাকৃতভাবে পাপকর্ম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা অপরিহার্য কিন্তু তারপরও যদি কখনো তা ঘটে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ লজ্জিত অন্তরে আল্লাহর কাছে তওবা করে নিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

ইচ্ছাকৃতভাবে পাপকর্ম করা বা তা থেকে তওবা করতে বিলম্ব করা জায়েজ নেই।‌ একথা বলা সংগত নয় যে, পরবর্তীতে তওবা করে সংশোধন হয়ে যাব। কারণ কার কখন কী পরিস্থিতিতে মৃত্যু ঘটবে সে ব্যাপারে কেউ জানে না।

তাইতো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্রুততার সাথে আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তি ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ

"আর তোমরা দ্রুত ছুটে যাও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকি তথা পরহেজগার ও আল্লাহ ভীরুদের জন্য।" [সূরা আলে ইমরান: ১৩৩]

▪️তাছাড়া আমাদের অজানা নয় যে, ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, শারীরিক এবং আর্থিক সক্ষমতা। এর জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ছাড়া নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমা নির্ধারণ করা নেই।

সুতরাং প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে যখনই এই শর্ত পাওয়া পাওয়া যাবে তখনই তার জন্য হজ করা ফরজ।

অতএব কোন ব্যক্তির উপরে যদি যৌবন বয়সে হজ ফরজ হয়ে থাকে তাহলে শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে তা বিলম্বিত করে বার্ধক্যের জন্য অপেক্ষা করা হারাম। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনতিবিলম্বে হজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা হতে পারে কোন আর্থিক সংকট, বিশ্ব পরিস্থিতি বা শারীরিক রোগব্যাধি ইত্যাদি কারণে পরবর্তীতে হজ আদায় করা সম্ভব হবে না।

যেমন: হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ - يَعْنِي : الْفَرِيضَةَ - فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ».

"তোমরা কাল বিলম্ব না করে ফরজ হজ আদায় করে নাও। কারণ তোমাদের কেউ জানে না, কী বিপদাপদ বা সমস্যা তার সামনে আসবে।" [সনাদে আহমদ‌ও ইবনে মাজাহ। হাদিসটি হাসান। দ্রষ্টব্য: শায়খ আলবানির ইরওয়াউল গালিল, হা/৯৯০]

আমাদের শারীরিক এবং আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান যুব সমাজ যদি যৌবন বয়সে আল্লাহর ঘরে এসে হজ আদায় করত এবং হজের শিক্ষাকে তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতো তাহলে আমাদের সমাজ আরো দ্রুত পরিবর্তন হতো। সমাজ থেকে পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়-অপকর্ম, দুর্নীতি এবং নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে যেত।


তাই কিয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আরশের ছায়া তলে আশ্রয় প্রত্যাশী যুবকদের কর্তব্য হলো, যৌবন বয়সকে আল্লাহর ইবাদতে কাটানোর দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করা এবং যদি শারীরিক ও আর্থিকভাবে হজ ফরজ হয়ে থাকে তাহলে অনতিবিলম্বে হজ করে ফেলা। এমনকি সম্ভব হলে বিয়ের পূর্বে কিংবা বিয়ের পরে নব দম্পতির সহকারে হজে আসা উচিত। আল্লাহ তৌফিক দান করুন আমিন।

-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

#abdullahilhadi

About the author

Salafweb
হ্যালো SalafWeb সদস্য, আমি গোলাব হোসেন এই ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা। আমি ২০২৪ সাল থেকে SalafWeb'র সাথে যুক্ত আছি।

Post a Comment

আপনার কমেন্ট রিভিউ করে দেখা হবে! প্রয়োজনে Salafweb কর্তৃপক্ষ আপনার কমেন্ট রিমুভ করার অধিকার রাখে।

Join the conversation

Disqus shortname is missing. Consider reporting about this message to the admin of this blog. It seems you are the admin of this blog, add disqus shortname through Theme HTML editor to enable Disqus comments.

Join the conversation