বিতর ও তাহাজ্জুদ সম্পর্কে দুটি প্রশ্নের উত্তর

বিতর সালাত, তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইল, বিতর ও তাহাজ্জুদ সম্পর্কে দুটি প্রশ্নের উত্তর, যদি ফজরের আগে বিতর স্বলাত পড়তে না পারি তাহলে তা ফজরের ওয়াক্ত হও,
Source: SalafiArchive.com

১ম প্রশ্ন: কেউ যদি ১ম রাতে ইশার সালাত আদায় শেষে বিতর পড়ে ঘুমিয়ে যায়। তারপর রাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করে। তাহলে কি পূণরায় বিতর পড়তে হবে?


উত্তর:


সাধারণ নিয়ম হল, কেউ যদি তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার নিয়ত করে তাহলে বিতর সালাত আদায় করবে না। বরং তাহাজ্জুদ পড়ার পর বিতর আদায় করবে। অর্থাৎ বিতর যেন হয় রাতের শেষ নামায। যেমন হাদীসে এসেছে-

عَنْ عَبْدِاللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِي اللَّه عَنْهمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْعَلُوا آخِرَ صَلاتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا


আবদুল্লাহ্‌ বিন ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমরা তোমাদের রাতের নামাযের সর্বশেষে বিতর নামায আদায় করবে।” [বুখারী, অধ্যায়ঃ জুমআর নামায, অনুচ্ছেদঃ সর্বশেষে বিতর নামায পড়া, হা/৯৪৩। ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদঃ রাতের নামায দু’দু রাকাত এবং শেষ রাতে বিতর এক রাকাত, হা/১২৪৫।]

কিন্তু যদি এমন হয় যে, কোন ব্যক্তির তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত ছিল না। যার কারণে সে ইশার সালাত শেষে বিতর পড়ে ঘুমিয় পড়ে। কিন্তু রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ার ইচ্ছা হয়।তাহলে দু রাকাআত দু রাকাআত করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবে কিন্তু পূণরায় বিতর পড়ার দরকার নাই। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لا وِتْرَانِ فِي لَيْلَةٍ

“একরাতে দুই বার বিতর বিতর নেই।”


(আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিতর, অনুচ্ছেদঃ বিতর ভেঙ্গে দেয়া হা/১২২৭। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ বিতর, অনুচ্ছেদঃ রাতে দু’বার বিতর নেই হা/৪৩২। শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ ছহীহ তিরমিযী, ১/১৪৬।)


——————


⬛ ২য় প্রশ্ন: আমরা তো তাহাজ্জুদ এর নিয়ত করেই ঘুমাই। কিন্তু যদি না উঠতে পারি এই চিন্তায় এশার সাথে বিতর পড়ে ফেলি। যদি তাহাজ্জুদের নিয়তে বিতর না পড়ি আর এরকম করে ঘুমানোর পর যদি বিতর মিস হয়ে যায়, তাহলে কি করণীয়?


উত্তর:

🔸 যদি সম্ভাবনা থাকে যে, শেষ রাতে উঠতে কষ্ট হবে তাহলে ইশার পরপরই তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা জায়েয আছে। তাহাজ্জুদ পড়ে তারপর বিতর পড়বেন।


🔸আর যদি শেষ রাতে উঠার নিয়ত থাকে তাহলে ইশার পর বিতর রেখে দিবেন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করার পর বিতর পড়বেন।


🔸 কিন্তু যদি তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত না থাকে বা উঠতে পারবেন না বলে আশংক থাকে আর সে কারণে বিতর পড়ে ফেলেন। কিন্তু দেখা গেল যে, ভোর রাতে উঠতে পেরেছেন বা শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার ইচ্ছা জেগেছে তাহলে সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে তাহাজ্জুদ আদায় করবেন। এ ক্ষেত্রে পূণরায় বিতর পড়ার প্রয়োজন নাই। কারণ, এক রাতে দুবার বিতর পড়া সিদ্ধ নয়।


🔸 যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করার নিয়তে ঘুমান। কিন্তু কোন কারণে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া সম্ভব না হয় তাহলে তা দিনের বেলায় কাযা করা জায়েয আছে। কিন্তু দিনের বেলায় বিতর বেজোড় না পড়ে জোড় আদায় করতে হবে। অর্থাৎ যদি এক রাকাআত বিতর পড়ার অভ্যাস থাকে দু রাকাআত পড়বেন। তিন রাকাআত বিতর পড়ার অভ্যাস থাকলে দু রাকাআত দু রাকাআত করে চার রাকআত আদায় করবেন।


⬛ দিনের বেলা বিতর সালাত কাযা করলে তা জোড় সংখ্যায় পড়ার দলীল ও আলেমদের মতামত:

—————–

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا فاتته الصلاة من الليل ـ من وجع أو غيره ـ صلى من النهار ثنتي عشرة ركعة.

“যদি কখনো নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নিদ্রা জনিত কারণে বা অসুস্থতার কারণে রাতে ক্বিয়ামুল্লায়ল (তাহাজ্জুদ) আদায় করতে অপারগ হতেন, তবে দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামায আদায় করতেন।”

(সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদ: রাতের যাবতীয় নামায এবং যে ব্যক্তি নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকবে বা অসুস্থ হয়ে যাবে। (এটি দীর্ঘ একটি হাদীছের অংশ বিশেষ) হা/১২৩৩)


এ হাদীস থেকেই অনেক আলেম বলেন, দিনের বেলা বেজোড় নামায নেই। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বেজোড় পড়েন নি।

উক্ত হাদীস থেকে ইবনে তাইমিয়া রহঃ. বলেন,

الصحيح أنه يقضي شفعه معه

“বিশুদ্ধ মত হল, (দিনের বেলা) কিয়ামুল্লায়ল (তাহাজ্জুদ) এর সাথে বিতর জোড় সংখ্যায় পড়বে”

আল্লামা উসাইমীন রহ. বলেন:

تصلي في الضحى وتراً مشفوعاً بركعة، فإذا كان من عادتك أن توتر بثلاث صليت أربعاً، وإذا كان من عادتك أن توتر بخمس فصل ستاً، لحديث عائشة ـ رضي الله عنها:

যোহা (অপরাহ্ণ) এর সময় এক রাকাআত যোগ করে বিতর পড়বে। তোমার যদি তিন রাকআত পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে চার রাকাআত পড়বে আর পাঁচ রাকআতের অভ্যাস থাকলে ছয় রাকাআত পড়বে। এরপর তিনি আয়েশা রা. থেকে উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা দলীল পেশ করেন।

সউদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ বিন বায. একই মত পোষণ করেন।


তবে হ্যাঁ, একদল আলেম বলেছেন যে, বিতর যেমন ছিল তেমনই পড়বে। (অর্থাৎ বেজোড়ই পড়বে; জোড় পড়বে না)

কিন্তু উক্ত হাদীসের আলোক দেখা যাচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে তাহাজ্জুদের সালাত বিতর সহ ১২ রাকাআত পড়েছেন। তিন বেজোড় পড়েন নি। সুতরাং এখান থেকে ১ম মতটি অধিক বিশুদ্ধ প্রমাণিত হয়।


এখন কেউ যদি ১ম মতটি গ্রহণ করতে চায় তাহলে তার স্বাধীনতা আছে। যেহেতু বিষয়টি দ্বিমত পূর্ণ। সুতরাং অন্য মতটি কেউ গ্রহণ করতে চাইলে তা করতে পারে। কিন্তু দলীলের আলোকে আমাদের কাছে ১ম মতটি অধিক বিশুদ্ধ বলে প্রতিয়মান হয়।


উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তি যদি বিতর নামায অন্য রাতে কাযা করতে চায় তাহলে তখন যথানিয়মে (অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যায়) আদায় করতে হবে। জোড় সংখ্যায় পড়ার বিষয়টি কেবল দিনে কাযা করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আল্লাহু আলাম।

আল্লাহু আলাম।

————————

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, দাঈ, জুবাইল সৌদি আরব। 

About the author

Salafweb
হ্যালো SalafWeb সদস্য, আমি গোলাব হোসেন এই ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা। আমি ২০২৪ সাল থেকে SalafWeb'র সাথে যুক্ত আছি।

Post a Comment

আপনার কমেন্ট রিভিউ করে দেখা হবে! প্রয়োজনে Salafweb কর্তৃপক্ষ আপনার কমেন্ট রিমুভ করার অধিকার রাখে।

Join the conversation

Disqus shortname is missing. Consider reporting about this message to the admin of this blog. It seems you are the admin of this blog, add disqus shortname through Theme HTML editor to enable Disqus comments.

Join the conversation