সালাত শুরু করার পূর্বে সশব্দে নিয়ত ও জায়নামাজের দুআ পাঠের বিদআত

2024 সালে সালাহ শুরু করার আগে পাঠ করার জন্য শক্তিশালী দুআ, ধাপে ধাপে: 2024 সালে জায়নামাজ করার আগে কীভাবে দুআ পাঠ করবেন, আপনার প্রার্থনা উন্নত করুন:,
Source: SalafiArchive.com

সালাত শুরু করার পূর্বে সশব্দে ‘নিয়ত’ ও ‘জায়নামাজের দুআ’ পাঠের বিদআত: যে বিদআতে নিমজ্জিত অধিকাংশ নামাযী

প্রশ্ন: সালাতে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দুআ “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া…” ও নিয়ত “নাওয়াইতো আন…” পাঠ করার বিধান কি?

উত্তর: সালাতে দাঁড়িয়ে মুখে উচ্চারণ করে প্রচলিত গদ বাধা নিয়ত পাঠ করা বিদআত। চাই আরবিতে “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি…” পাঠ করা হোক বা বাংলায় তার অনুবাদ পাঠ করা হোক। অনুরূপভাবে তথাকথিত ‘জায়নামাজের দুআ’ হিসেবে “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া” অথবা আঊযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, দরুদ শরিফ ইত্যাদি পাঠ করাও বিদআত। কেননা সালাত শুরু করার পূর্বে বিশেষ কোন দুআ, তাসবীহ বা অন্য কিছু পাঠ করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় কোনো নির্দেশনা নেই। সাহাবিগণও কখনো এমন আমল করেন নি। এমন কি চার মাজহাবের সম্মানিত ইমামগণ তথা ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল প্রমুখ মনিষীগণ কেউই তা পড়ার কথা বলেন নি।

◉◉ সশব্দে নিয়ত পাঠ করার ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত আলেমদের বক্তব্য:

নিম্নে এ প্রসঙ্গে কতিপয় আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

◖ক. মোল্লা আলী কারী হানাফি রহ. বলেন,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ত্রিশ হাজার ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন। তথাপি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই কথা বর্ণিত নেই যে, আমি অমুক অমুক ওয়াক্ত নামাযের নিয়ত করছি। সুতরাং মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করাটাই সুন্নাত। জেনে রাখুন, শব্দ উচ্চারণ করে মুখে নিয়ত করা জায়েজ নয়। কারণ এটা বিদআত। সুতরাং যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নি তা যে করে সে বিদআতি। [দেখুনঃ মিরকাত, ১/৩৬-৩৭]

◖খ. আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফি রহ. বলেন:

হাদিসের বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ ও যঈফ কোন সনদেও এই কথা প্রমাণিত নেই যে, তিনি নামায আরম্ভ করার সময় বলতেন যে, আমি এই এই নামায আদায় করেছি। কোন সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও প্রমাণিত নেই। বরং এই কথা বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আরম্ভের সময় কেবল শুধু তাকবীর বলতেন। তাই মুখে নিয়ত পাঠ করা বিদআত। [ফাতহুল কাদীর, ১/৩৮৬, কাবীরী, পৃষ্ঠা ২৫২]

.

◖ গ. হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহ. বলেনঃ


মুখে নিয়ত পাঠ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ কারো হতেই কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। মুখে পাঠের এই পদ্ধতি শয়তানের একটি কুমন্ত্রণা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন শুধু “আল্লাহু আকবার” বলতেন। আর আগে কিছু বলতেন না। সুতরাং মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা বিদআত। চার ইমামও এরূপ নিয়তনামা পড়াকে পছন্দ করেন নি। [ইগাসাতুল লাহফান, ১/১৩৬ ।। যাদুল মাআদ, ১/৫১]

.

◖ঘ. সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রাহ. বলেনঃ


“আরবি নিয়ত শব্দের অর্থ হল মনে ইচ্ছা পোষণ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এটা (মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা) প্রমাণিত নেই। না প্রমাণিত আছে কোন সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও। তাই মুখে নিয়ত পাঠ করা বিদআত।” [ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ৩৩৯-৩৪০ পৃষ্ঠা]

(উপরোল্লিখিত আলেমদের বক্তব্যগুলো উমর ইবনুল খাত্তাব এর লেখা থেকে সংকলন করা হয়েছে।)


এছাড়াও এ প্রসঙ্গে বহু বিশ্ববরেণ্য আলেমদের বক্তব্য রয়েছে।


অত্র আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা দ্বীনের মধ্যে এটি নব আবিষ্কৃত বা নব সংযোজিত বিদআত। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি। আর গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম।


আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।


◉◉ সালাত শুরু করার সঠিক পদ্ধতি:


সালাত শুরু করার সঠিক পদ্ধতি হল, প্রথমে কোন সালাত পড়া হবে তা অন্তরে স্থির করা। (যেমন: ফরয, সুন্নত, নফল, কাযা ইত্যাদি) অত:পর মহান আল্লাহর সীমাহীন সম্মান-মর্যাদার কথা স্মরণ করে অন্তরে ভয়ভীতি, বিনয়-নম্রতা ও একাগ্রতা সহকারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সালাত শুরু করা।

তারপর হাদিসে বর্ণিত সানা বা দুআউল ইস্তিফতাহ (সালাত শুরুর দুআ) এর একাধিক দুআ থেকে যে কোনো একটি দুআ পাঠ করা।

তারপর “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম” পাঠ করার পর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সহকারে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। এরপর যথারীতি সালাত শেষ করা।


◉◉ নিয়ত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা:


মনে রাখতে হবে, নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হয় না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى

“আমল সমূহ নিয়তের (ইচ্ছার) উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে।” [সহিহ বুখারির প্রথম হাদিস]

এ হাদিসের আলোকে সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত, কুরবানি সহ যে কোন ইবাদতের শুরুতে নিয়তের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তা হবে অন্তরে। কেননা নিয়তের নিয়ত আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ: ইচ্ছা করা, মনস্থ করা, এরাদা করা, সংকল্প করা। [মুনজিদ, ৮৪৯/ ফতহুল বারী, ১/১৭]


ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেনঃ “নিয়ত হচ্ছে, কোন কিছু করার ইচ্ছা করা এবং সংকল্প করা। উহার স্থান হচ্ছে অন্তর জবানের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। এ কারণে না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আর নাা কোন সাহাবী হতে নিয়তের শব্দ বর্ণিত হয়েছে”। [ইগাসাতুল্ লাহ্ফান, ১/২১৪]

সুতরাং সালাত শুরু করার পূর্বে কোন সালাত, কয় রাকআত, তা ফরয, সুন্নত না কি নফল এ বিষয়গুলো অন্তরে জাগ্রত থাকলে তাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট।

আসুন, আমরা সুন্নাত অনুযায়ী সালাত আদায় করি এবং বিদআত বর্জন করি। সুন্নতে রয়েছে মুক্তি আর বিদআতে রয়েছে ধ্বংস। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।


উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, দাঈ, জুবাইল সৌদি আরব। 

About the author

Salafweb
হ্যালো SalafWeb সদস্য, আমি গোলাব হোসেন এই ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা। আমি ২০২৪ সাল থেকে SalafWeb'র সাথে যুক্ত আছি।

Post a Comment

আপনার কমেন্ট রিভিউ করে দেখা হবে! প্রয়োজনে Salafweb কর্তৃপক্ষ আপনার কমেন্ট রিমুভ করার অধিকার রাখে।

Join the conversation

Disqus shortname is missing. Consider reporting about this message to the admin of this blog. It seems you are the admin of this blog, add disqus shortname through Theme HTML editor to enable Disqus comments.

Join the conversation